তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

-নাজমুল হাসান

তেলাকুচা একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চারপাশে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে একে কুচিলা’, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

পৃথিবীর প্রায় অনেক অঞ্চলে এই গাছটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এই গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এই গাছের লতা-পাতা, ফল- মূল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

উদ্ভিদের ধরণ :
এটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে। পঞ্চভূজ আকারের এর ।...পাতা গজায়, এর পাতা এবং লতার রং গাঢ় সবুজ। এমনকি এই গাছটির ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেখানে। তেলাকুচাতে প্রচুর পরিমানের বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে।

রোপনের সময় :
তেলাকুচা দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই রয়েছে, তাছাড়াও রয়েছে মানুষের বসত বাড়ির আশে পাশে, রাস্তার পাশে র এই গাছটি বেশি জন্মায় বনে-জঙ্গলে এবং এরা সর্বস্থানেই নিজেদের বংশ বিস্তার করে থাকে। সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়।পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীস্মকালে মৌসুমি বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে।

তেলাকুচার ঔষধি গুণাগুণ :
তেলাকুচা যে শুধু একটি লতা পাতা গাছ তা কিন্তু না, এই গাছে একটি ফল ও ধরে যা দেখতে গাঢ় সবুজ এবং এটি পাকলে টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করে, তেলাকুচা এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানের ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় একটি উপাদান। তেলাকুচা কবিরাজী চিকিত্‍সা সহ বেশ কিছু রোগে এটি ব্যবহৃত হয়, যেমন: কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, শোথ (edema), হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস ইত্যাদি ।

ডায়াবেটিস:
ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কান্ড সমেত পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়। পাতা ভেজেও খেতে পারেন।

জন্ডিস :
সাধারণত জন্ডিস হলে তেলাকুচা গাছটির মূল ছেঁচে তার রস তৈরি করে সেটি প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ করে খেতে হবে।

পা ফোলা রোগে :
গাড়িতে ভ্রমণের সময় বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ফুলে যায় একে শোথ রোগ বলা হয়। তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩-৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে।

শ্বাসকষ্ট :
সাধারণত বুকে সর্দি-কাশি বসে যাওয়ার কারণে যে শ্বাসকষ্ট (হাপানি রোগ নয়) তৈরী হয় তখন তেলাকুচা গাছটির মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ৩ থেকে ৪ চা চামচ পরিমাণে তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে নিয়মিত খেতে হবে।

কাশি হলে :
শ্লেস্মাকাশি হলে সাধারণত শ্লেস্মা তরল করতে এবং কাশি উপশমে করতে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ চা চামচ তেলাকুচা গাছটির মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকাল এবং বিকালে নিয়মিত খেতে হবে।

শ্লেম্মাজ্বর :
শ্লেষ্মাজ্বর হলে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ২-৩ দিন সকাল- বিকাল খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে তেলাকচুর পাতার পাটায় বেটে রস করতে হবে।

মহিলাদের স্তনে দুধ স্বল্পতা :
সন্তান প্রসবের পর সাধারণত অনেক মহিলাদের স্তনে দুধ আসে না বা সারা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এমন অবস্থা দেখা দিলে প্রতিদিন ১টি করে তেলাকুচা গাছের ফলের রস হালকা গরম কুসুম কুসুম করে খাঁটি মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। তেলাকুচা ফলটি একটু তিতে হওয়ায় এর সাথে পরিমাণমত মধু মিশিয়ে সকাল ও বিকাল একটানা ১ সপ্তাহ খেতে হবে।

মা হলেও স্তনে দুধ নেই?
শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে?

যদি কোনো মহিলার এই রকম সমস্যা দেয় তবে এক্ষেত্রে তাকে তেলাকুচার কাঁচা সবুজ ফলের রস হালকা একটু কুসুম কুসুম গরম করে ছেঁকে তা থেকে ১ চা চামচ রস নিয়ে তাতে ২ থেকে ৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ২ বার করে খেলে ৪ থেকে ৫ দিনের ঐ মহিলার স্তনের মধ্যে দুধ আসবে।


ফোঁড়া ও মুখের ব্রণ :
ফোড়া বা মুখে ব্রণ হলে আমরা সাধারণত মুখে নান ধরণেরক্রিম ব্যবহার করে থাকি, এতে আমাদের মুখের ত্বক অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়, এর বিপরীতে আপনি তেলাকুচা গাছের পাতার রস বা এই গাছের পাতা ছেঁচে নিয়ে ফোঁড়া ও মুখের ব্রণে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল ব্যবহার করতে পারেন।

আমাশয়:
যদি কোনো বেক্তির প্রায়ই আমাশয় হতে থাকে, তাহলে তাকে তেলাকুচা গাছের মূল ও তেলাকুচা গাছের পাতার রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ তিন থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে খেতে দিতে হবে।

অরুচিতে :
সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচা গাছের কিছু পাতা একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তারপর সেই পাতা গুলো একটু সিদ্ধ করে নিয়ে পাতা গুলো ভালোভাবে ছেঁকে (জল ফেলে দিয়ে) তাতে একটু ঘি দিয়ে শাকের মত করে রান্না করে নিতে হবে। এরপর খেতে বসে প্রথমেই সেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে।